ঘণ্টায় ৩০ লাখ টাকার দুধ বিক্রি হয় যে বাজারে
প্রতিক্ষণ ডেস্ক
বগুড়ার শেরপুর পৌরসভার শিশু পার্ক এলাকায় প্রতিদিন বসে অনন্য এক দুধের হাট। মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই এখানে বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার লিটার দুধ, যার বাজারমূল্য দাঁড়ায় ১৮ থেকে ৩০ লাখ টাকা।
মামুরশাহী গ্রামের গৃহিণী রেখা বেগম প্রতিদিন তাঁর একটি গাভীর ৮ থেকে ১০ লিটার দুধ নিয়ে আসেন এই বাজারে। তাঁর মতো শত শত ক্ষুদ্র খামারি দুপুরের দিকে হাটে দুধ বিক্রি করতে আসেন। ক্রেতাদের মধ্যে মূলত স্থানীয় দই ও মিষ্টি ব্যবসায়ীরাই এগিয়ে থাকেন।
করোনাকালে প্রশাসনের উদ্যোগে দুধের এই বাজারটি শহরের বারোদুয়ারী এলাকা থেকে স্থানান্তরিত হয়ে পৌরসভার শিশু পার্কে জায়গা পায়। বর্তমানে এটি শেরপুর, ধুনট, তাড়াশ, রায়গঞ্জ, শাজাহানপুর ও নন্দীগ্রামের ২০০ থেকে ৩০০ গ্রামের খামারি ও কৃষকদের জন্য নির্ভরযোগ্য কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।
বোয়ালকান্দি গ্রামের তোতা মোল্লা প্রতিদিন আশপাশের ৫০–৬০টি বাড়ি থেকে দুধ সংগ্রহ করে বাজারে আনেন। তিনি বলেন, “এখানে ভালো দুধের কদর আছে। আমরা আসতেই ক্রেতারা কিনে নেন, এক ঘণ্টার মধ্যেই সব শেষ।”
ধরমোকাম গ্রামের বিক্রেতা আবু হোরায়রা প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ লিটার দুধ নিয়ে আসেন। তিনি জানান, তাঁর পরিবারের জীবিকা পুরোপুরি নির্ভর করে এই দুধ বিক্রির ওপর।
বগুড়ার বিখ্যাত দইয়ের মূল যোগানদাতারা শেরপুরের দই ব্যবসায়ী। প্রতিদিন এখান থেকে শত শত মণ দই দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হয়। ব্যবসায়ী আনন্দ ঘোষ বলেন, “এখানকার দুধের মান ভালো। খামারিরা গরুকে প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ান, তাই দুধও উৎকৃষ্ট মানের হয়।”
অন্য ব্যবসায়ী মাজেদুল ইসলাম চুন্নু জানান, শেরপুরের মাটি, পানি ও আবহাওয়া দইকে আরও সুস্বাদু করে তোলে। “আমরা চাইলে ল্যাক্টোমিটার দিয়ে দুধ পরীক্ষা করি, সবসময়ই মান বজায় থাকে,” বলেন তিনি।
শেরপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কাজমীর রহমান জানান, উপজেলায় প্রায় সাড়ে সাত হাজার খামার আছে। প্রতিটি খামারে গড়ে ১০ থেকে ২০টি গাভী থাকে, যেগুলো প্রতিদিন ১০ থেকে ২০ লিটার দুধ দেয়। উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর নিয়মিত প্রশিক্ষণ, টিকা ও চিকিৎসা সেবা প্রদান করে আসছে।
বাজারে প্রতিলিটার দুধের দাম ৫০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন এই বাজারে কোটি টাকার দুধ বেচাকেনা হচ্ছে, যা শেরপুরের অর্থনীতি ও দই শিল্পকে সমৃদ্ধ করছে।












